কবির য়াহমদ : দেশে হঠাৎ করে গণগ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে একেবারে প্রান্তিক কর্মী পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের প্রতি মানুষের যে ধারণাই থাকুক না কেন, কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেশিরভাগ সাধারণ নেতাকর্মীদের মানুষ সমাজের একজনই ভাবে।
গণগ্রেপ্তারের এই গণপরিসরের প্রেক্ষাপটে মানুষের কাছে সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছে। আগে মানুষ বিষয়টা যেভাবে দেখছিল, এখন সেটা দেখছে না অনেকটাই। আগের বিশ্লেষণের সবটাই যেখানে ছিল রাজনৈতিক, এখন এটা সামাজিক আবহে রূপ লাভ করেছে।
গত দুই মাসের দেশ-পরিস্থিতি, উচ্চাশা থেকে হতাশা, কোথাও ইতিবাচক পরিবর্তন না দেখা মানুষেরা এখন পতিত আওয়ামী লীগে নিয়েও নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে।
মানুষের ভাবনার মূলে রয়েছে ছাত্রজনতার আন্দোলন নিয়ে নানা কথা, বিশেষ করে মুহাম্মদ ইউনূসের সূত্রে জানা সেই বক্তব্য দীর্ঘ পরিকল্পনা বা মেটিক্যুলাস শব্দ, আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড, ছাত্রনেতাদের গণত্রাণের নয়-ছয়, দখল-বেদখল বাণিজ্য, নিরাপত্তাহীনতা, বিএনপিকে বাদ দিয়ে জামায়াতকে হঠাৎ লাইমলাইটে নিয়ে আসার চেষ্টা, মব-ট্রায়াল, শিক্ষকদের অসম্মান-হয়রানি।
কেউ অস্বীকার করতে চাইলেও গণভাবনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, বিএনপির পর আওয়ামী লীগ। এটা একটা চক্র মানুষের ভাবনার মধ্যে। এই ভাবনায় এবার আঘাত এসেছে বড় পরিসরে। দুই মাসের দেশ পরিস্থিতিতে মানুষ এখন ভাবতে শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেকের মধ্যে বিএনপির প্রতিও বিদ্বেষ রয়েছে। এটা সন্দেহের চোখে দেখছে অনেকেই।
আরেকটা বিষয়, আমেরিকার ভিসাপ্রত্যাশী দেশের প্রায় শতভাগ হলেও আমেরিকার সঙ্গে দহরম-মহরম বেশিরভাগেরই অপছন্দের। ইউনূস-বাইডেনের তুমুল আলিঙ্গনকে অন্য চোখে দেখছে তাই মানুষ। আগে থেকেই মুহাম্মদ ইউনূসকে মানুষ দেখে ভিন্ন চোখে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার বার বার বলছিল, তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না আমেরিকা। আওয়ামী লীগের বলা সেই কথা, আর দুই দেশের দুই সরকারপ্রধানের তুমুল আলিঙ্গন কিন্তু সেই কথাটাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
দুই মাস ধরে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী ঘর-বাড়িছাড়া। এখন একে একে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই গ্রেপ্তারের প্রথম কিছুদিন তারা শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হলেও একটা সময়ে এটা কমে আসবে। ফলে জেলখানার মতো একটা পরিবেশে থেকে ফের তারা সংগঠিত হতে শুরু করবে। বাইরে থেকে মনে হতে পারে জেলে থেকে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে, কিন্তু একটা সময়ে এর বিপরীত হবে। বরং দলের প্রতি নিবেদন তাদের বাড়তেই থাকবে। এখন বাইরে থেকেও একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগহীন হয়ে থাকলেও জেলে যাওয়ার সুবাদে তারা ফের অনেকের সঙ্গে মিলিত হবে।
সাধারণত জেলে যারা যায় তারা প্রাথমিক চিন্তাতেই থাকে সরকারবিরোধী। আগে থেকে যারা জেলে এবং নতুন যারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে ভাবনার আদানপ্রদান হবে। ফলে জেলে থেকেও তারা বার্তা দিতে পারবে বাইরে, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে।
এখন যারা জেলে যাচ্ছে তারা তো আজীবন ভেতরে থাকবে না। মাস ছয়েক এমন কঠোর নীতি থাকবে তাদের প্রতি। এরপর একে একে বেরিয়ে আসার পর এক বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু লোক ছাড়া সকলেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাদের বাইরে বেরিয়ে আসার পর বেশিরভাগই জড়াবে প্রকাশ্য রাজনীতিতে। জেল খেটে বাইরে বেরিয়ে আসায় জনপরিসরে তাদের পরিচিতি হবে ত্যাগী রাজনীতিক। ত্যাগীদের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের প্রতি জমা থাকে প্রচণ্ড আবেগ।
আবেগে মানুষ অতীত ভুলে যায়। সারাদেশের পাঁচ লক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে যদি সরকার জেলে পাঠায়, তবে তাদের প্রতি আবেগী হয়ে পড়বে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা নতুন আরও এক থেকে দুই কোটি লোক। বাই-বোর্ন আওয়ামী লীগ আছে দেশে কয়েক কোটি। আগের লোকদের সাথে নতুন লোকদের যোগ হলে অবস্থা বদলাতে সময় লাগবে না দশ মাস! লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। https://www.facebook.com/kabiraahmed2014
Leave feedback about this