জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
লেডিঞ্জে গ্রেন্ড, স্টকহোম,সুইডেন
অর্থনীতি

তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে চিন্তার সময় আসছে

কাজী এম. মুর্শেদ : তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে চিন্তার সময় আসছে। সিরিয়াসলি চিন্তা করতে হবে। এবং এখনই চিন্তা করা শুরু করতে হবে। আমি কিছু ডেটা দেই, কিছু সাল উল্লেখ করবো মেমোরি থেকে, ভুল হলে ঠিক করে পড়ে নিয়েন। তবে কিছু বিরক্তিকর পাঠক আছেন যারা কোন একটা তথ‍্য ভুল হলে মোচড়ামোচড়ি করেন, তারা পুরোটা পড়লে ভালো, উত্তর না দিলো আরো ভালো।

এতো বছরে অনেক কিছু নিয়ে লিখে গেছি। লাভ হয় নাই, যাদের জন‍্য লেখা তারা বড় পোস্ট পড়েন না। তারপরও আমার লজিক নিয়ে কথা বলে যাবো। ভুল বা ঠিক সেটা বিচার করার কিছু নাই। পড়ার ইচ্ছা হলে পড়েন না হলে কোন সমস‍্যা নাই।

তৈরি পোশাক শিল্প দেশের রফতানির ৮৪%, কিন্তু জিডিপিতে এর কন্ট্রিবিউশন ১০% এর মতো। এইখাতে কাঁচামাল আমদানিতে ওভারইনভয়েস করে আর রফতানিতে আন্ডারইনভয়েস করে একদফা চুরি হয়, আবার এলসি সেটেলমেন্টের ডলার ফিরিয়ে না এনে আরেক দফা চুরি হয়। আমার আগেও লেখা ছিলো ডাচ ডিজিস নিয়ে, রফতানি আয় যখন একটা পন‍্য নির্ভর হয়, ডাচ ডিজিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী। সেই থ্রেশহোল্ডে আমরা আছি।

অন‍্য বিষয়ে বলি। ফোর্থ আই আর বা চতুর্থ শিল্প বিল্পবের কথা বলেন ২০১৬ সালে ক্লাউস শোয়াব যিনি ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) শুরু করেন। এখানে যেই ২৩ ধরনের প্রেডিকশন ছিলো, তার একটা শ্রমঘন শিল্পগুলো একটা সমূহ বিপদে পরবে। টেকনোলজিকাল এ‍্যাডভান্সমেন্টের জন‍্য কম লোক নিয়ে বেশী কাজ হবে। এখানে একটা উদাহরন ছিলো জার্মানে কেউ চাইলেন তার নিজের ডিজাইন মতো কাপড় পরতে চাইলে দোকানে যাবে না বা অপেক্ষা করবে না। থ্রি-ডি প্রিন্টার দিয়ে নিজেই করে নিতে পারবে। বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পের জন‍্য এটা তেমন ভালো খবর না।

২০১৮ সালে ইউভাল নোয়া হারারি তার টোয়েন্টিওয়ান লেসনস ইন টোয়েন্টিফার্স্ট সেন্চুরি বইতে এই শ্রমঘন শিল্পের উদাহরন হিসাবে দুইটা উদাহরন দেন, এক বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এবং দুই ব‍্যাঙ্গালুরুর কল সেন্টার ইন্ডাস্ট্রি। আমাদের কথা বলি। বাংলাদেশের ব‍্যপারে তার বক্তব‍্য ছিলো, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে, অনেক কর্মী বেকার হবে। এটার কারন টেকনোলজিকাল এ‍্যাডভান্সমেন্ট এবং ক্রেতার নিজস্ব পছন্দ। হারারি একটা সমাধানও দেন, বাংলাদেশের উচিত হবে এই যে প্রধান আশংকা, বাংলাদেশের উচিত হবে টেকনোলজিতে জ্ঞানঅর্জন, উন্নয়ন এবং এমন কিছু করা। তিনি উদাহরন হিসাবে থ্রিডি প্রিন্টারের পিছনে আরো জোর দিতে, ডিজাইন করতে এবং কাঁচামালের যোগান নিয়ন্ত্রন নিতে বলেন। অন‍্য কথায়, বাংলাদেশ যদি থ্রিডি প্রিন্টার বাজার উন্নয়নে অগ্রনী থাকে, তাহলে কর্মীদের চাকরি যাবার আগেই নূতন কাজে সামনে থাকবে।

২০১৭ সালে কপ-১৭ এর শুরু, ২০২০ নাগাদ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয় যেনো কার্বন এমিশন জিরো করা যায়। এর একটা উপাদান ছিলো কম দামে বেশী কাপড় না কিনে পরিবেশ বান্ধব কাপড়ের ব‍্যবহার। সরাসরি এটা তৈরী পোষাক শিল্পকে একটা বিপদের দিকে নিয়ে যায়।
একই বছর ২০২০ এ ফাস্ট ফ‍্যাশন বলে একটা ধারনা চালু হয়। এর অর্থ আপনি কার্যাদেশ দিয়ে অপেক্ষা করবেন না, অথবা অন‍্য কারো ডিজাইনের জন‍্য তাকিয়ে থাকবেন না। আপনার যা কেনার ইচ্ছা কমসময়ে হাতে পাবেন।

একই বছরে সেই পুরানো ডেল মডেল সামনে আসে। ডেল মডেল হলো, আপনি অর্ডার দিলেন আপনার দরকার মতো, ল‍্যপাটপ তৈরী হয়ে আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। এতে ক্রেতা ও তৈরীকারক সরাসরি যোগাযোগ করে। মাঝে কোন মিডলম‍্যান থাকে না। বায়িং হাউস বা আউটলেটের কোন অস্তিত্ব নাই। এই কনসেপ্টের নাম ডিরেক্ট টু কনজিউমার। এতে সময় বাঁচে, এবং যদিও শিপমেন্ট খরচ বাড়ে, বাংলাদেশ এই শিপমেন্টের উপর আলাদা বিজনেস প্লান তৈরী করে অতিরিক্ত ব‍্যবসার পথ খুলতে পারে।

এই ২০২৪ সালে বসে বলছি, ফাস্ট ফ‍্যাশন, জিরো কার্বন এমিশন, ডিরেক্ট টু কনজিউমার এবং কাট দ‍্যা মিডলম‍্যান আউট চারটা কনসেপ্টই কাজ করছে। আগামী কয়েক বছরে আরো এগোবে। আমাদের তৈরী পোষাক শিল্প মালিকরা গভীরভাবে চিন্তা করার পাশে বিদেশে বাংলাদেশ কনস‍্যুলারগুলোর কাজ করার সময় আসছে। এক চ‍্যানেলে হিসাব দেখলাম, শুধু বাংলাদেশের ১১ লাখ কর্মী ছাঁটাই হবার সম্ভাবনা আছে। তৈরী পোষাক শিল্প নারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা দিয়েছে, আজকাল আন্দোলনে দেখি নারী পুরুষ সমান কাজের অধিকার চায়। এর অর্থ যেই শিল্প প্রায় ৩০ লাখ নারী শ্রমিকের সংস্থান করেছে, পুরুষদের চাকরীর স্বল্পতার জন‍্য তারা চাইছে নারীদের ছাঁটাই করে তাদের নেয়া হোক। আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন‍্য এইটা আত্মঘাতিমূলক পদক্ষেপ হয়ে দাড়াবে।

আমি কেন ভবিষ‍্যৎবানীতে বিশ্বাস করিনা, কোন কিছু মিললে খুশী হই না, অথবা না মিললে দুঃখ পাই না। আমার লেখায় ডেটা থাকবে, তথ্য থাকবে, লজিক থাকবে। যদি কিছু সেইমত হয়, তাহলে ‘দেখিছেন আমি কছিলাম না, মিলিছে?’ এই ধরনের কোন অভ‍্যাস নাই। আমার দরকার সতর্ক করার, করলাম।

সমস্যা নিয়ে কথা বলবো, সমাধান বার করেন। বের না করলে সেটা নীতিনির্ধারকদের ব‍্যর্থতা। তৈরী পোষাকের বাইরে রফতানিযোগ‍্য পন‍্য তৈরী না করলে ডাচ ডিজিজের সামনে পরতে হবে। লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক। সূত্র : https://www.facebook.com/murshed.quazi

    Leave feedback about this

    • Quality
    • Price
    • Service

    PROS

    +
    Add Field

    CONS

    +
    Add Field
    Choose Image
    Choose Video